জন্ম নিবন্ধন হলো একটি চলমান প্রক্রিয়া।একটি শিশুর জন্মের পরেই সরকারের খাতায় নাম উঠানোর প্রক্রিয়াই হল জন্ম নিবন্ধন।এটি একটি শিশুর জন্ম হয়েছে সেই তথ্য তার নিজ দেশকে ও বিশ্বকে জানান দেয়ার একটি প্রাথমিক আইনগত ধাপ।এটি হচ্ছে একটি শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের নাগরিক অধিকার।এটি একটি শিশু ও একজন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের রাষ্ট্রীয় পরিচয় বহন করে।জন্ম সনদ বাধ্যতামূলক করার লক্ষ্যে সরকার জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন ২০০৪ প্রণয়ন করেছে। জাতিসংঘের শিশু সনদে (Convention on the Rights of the Child- CRC) উল্লেখ করা হয়েছে। ৩ জুলাই ২০০৬ জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, শিশু অধিকার সংরক্ষণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আইনটি কার্যকর করা হয়।বাংলাদেশে জন্মগ্রহণকারী প্রতিটি শিশুর জন্য এই প্রক্রিয়াটি বাধ্যতামূলক। এর প্রক্রিয়া শেষ করার পরে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ নিবন্ধনকারী কে একটি সনদ প্রদান করিবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে ২০১০ সালে এর কার্যক্রম গুলো অনলাইনের আওতাভুক্ত করা হয়।বাংলাদেশের ৫৫ টি জেলায় এর কার্যক্রম চলমান রয়েছে এর পাশাপাশি বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশের ১৭ টি দূতাবাসে এর কার্যক্রম চলমান।২০১৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের শতভাগ মানুষ এই নিবন্ধন প্রক্রিয়ার আওতাধীন হয়েছে। Table of Contents Toggle একটি জন্ম নিবন্ধন বহিতে কি কি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে?বর্তমানে জন্ম নিবন্ধন এর ব্যবহার ও এর গুরুত্ব কি?জন্ম সনদ করলে কি কি সুবিধা ও না করলে কি কি অসুবিধা? জন্ম সনদ করলে কি সুবিধাঃ না করলে কি কি অসুবিধা?জন্ম নিবন্ধন করার সময় ও নিয়মাবলীঃজন্মসনদ করার জন্য আমরা কোথায় যাব?জন্ম নিবন্ধনের জন্য কারা দায়িত্বরত রয়েছেন ?জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম কি?প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ একটি জন্ম নিবন্ধন বহিতে কি কি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে? নিবন্ধন বহি নংঃ নিবন্ধন তারিখঃ নিবন্ধন নংঃ সনদ ইসুর তারিখঃ ব্যক্তিগত পরিচিতি নংঃ নিবন্ধনকারীর নামঃ নিবন্ধনকারীর জন্ম তারিখ সংখ্যায় এবং কথায়ঃ নিবন্ধনকারীরর লিঙ্গঃ নিবন্ধনকারীর জন্মস্থান/ গ্রাম/ ইউনিয়ন /সিটি কর্পোরেশন/উপজেলা/ জেলা/ দেশ। নিবন্ধনকারীর পিতার নামঃ নিবন্ধনকারীর মাতার নামঃ নিবন্ধনকারীর পিতারজাতীয়তাঃ নিবন্ধনকারীর মাতার জাতীয়তাঃ নিবন্ধনকারীর স্থায়ী ঠিকানা ইত্যাদি। বর্তমানে জন্ম নিবন্ধন এর ব্যবহার ও এর গুরুত্ব কি? পাসপোর্ট ইস্যু বিবাহ নিবন্ধন; শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি; সকল প্রকার সরকারি বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ দান; ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু; ভোটার তালিকা প্রণয়ন; জমির রেজিস্ট্রেশন ; ব্যাংক একাউন্ট খোলা; আমদানি বা রপ্তানি বা উপায় লাইসেন্স প্রাপ্তি; গ্যাস,পানি, টেলিফোন ও বিদ্যুৎ সংযোগ প্রাপ্তি; টেক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টি আই এন) প্রাপ্তি; ঠিকাদারি লাইসেন্স প্রাপ্তি; বাড়ির নকশা অনুমোদন; গাড়ি রেজিস্ট্রেশন; ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি; জাতীয় পরিচয় পত্র প্রাপ্তি ; জন্ম সনদ করলে কি কি সুবিধা ও না করলে কি কি অসুবিধা? জন্ম সনদ করলে কি সুবিধাঃ কোর্টে মামলা হলে জন্ম নিবন্ধন থাকার কারণে সাজা না হওয়া বা কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। দৈনন্দিন জীবনে সরকারি এবং বেসরকারি যে কোন কর্মকাণ্ডের সাথে জন্মসনদের সম্পৃক্ততা রয়েছে সুতরাং জন্মসনদ থাকলে প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের কাজগুলো সহজ হয়ে যায়। সরকারি অথবা বেসরকারি যেকোনো চাকরির ক্ষেত্রে বয়সের সত্যতা যাচাই করার জন্য জন্মসনদ অত্যাবশ্যক জন্ম নিবন্ধন করলে চাকরির ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা হবে না বিবাহ করার ক্ষেত্রে বিবাহ নিবন্ধনের জন্য মেয়ের ১৮ বছর এবং ছেলের ২২ বছরবয়স হওয়া বাধ্যতামূলক এটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আইন জন্ম নিবন্ধন থাকলে বিবাহ নিবন্ধনের ক্ষেত্রে বয়স যাচাই করা সহজ হয়। রেজিস্টার অথবা কাজির কোন সমস্যা হয় না।জন্ম সনদ থাকলে উপরে বর্ণিত সকল সেবা পাওয়া যাবে।জন্ম সনদ থাকলে শিশুশ্রম, বাল্যবিবাহ রোদ হবে। যেহেতু বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী ১৮ বছরের পূর্বে কোন নাগরিক আইডি কার্ড পাবে না তাই আইডি কার্ড সংগ্রহ করার জন্য জন্ম সনদের প্রয়োজন। বিদেশে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট এর অবশ্যই প্রয়োজন কিন্তু যদি জন্ম নিবন্ধন না থাকে তাহলে পাসপোর্ট করা যাবে না জন্ম সনদ থাকলে পাসপোর্ট করা যাবে। যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হবার জন্য জন্ম সনদ প্রয়োজন সুতরাং জন্ম সনদ থাকলে সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া যাবে। না করলে কি কি অসুবিধা? আইডি কার্ড পাওয়ার আগ পর্যন্ত একটি জন্ম সনদ একজন নাগরিকের পরিচয় অথবা পরিচিতি বহন করে আইডি কার্ড পাওয়ার আগে একজন ব্যক্তির যদি জন্ম সনদ না থাকে তাহলে তিনি রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পাবে না এবং রাষ্ট্রের সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে এবং রাষ্ট্রীয় সকল কর্মকান্ডে বাধাগ্রস্ত হবে। জন্ম সনদ না থাকলে কোন প্রকার জাতীয় সনদ বা লাইসেন্স প্রাপ্তিতে ব্যাহত হইবে। যেকোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া থেকে বঞ্চিত হইবে। সরকারি বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ দান হইতে ব্যাহত হইবে। আইডি কার্ড প্রাপ্তির আগে জন্ম সনদ এর তথ্যের উপর ভিত্তি করে একটি ভোটার স্লিপ প্রদান করা হয় যার দ্বারা একজন নাগরিক জাতীয় যেকোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করিতে পারে সুতরাং জন্ম সনদ না থাকলে ভোটে অংশগ্রহণ করা সম্ভব হইবে না। আরো বিভিন্ন প্রকার অসুবিধার সম্মুখীন হইতে হইবে। জন্ম নিবন্ধন করার সময় ও নিয়মাবলীঃ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আইন অনুযায়ী শিশু জন্মগ্রহণের ৪৫ দিনের মধ্যে তার জন্ম সনদ তৈরি করা বাধ্যতামূলক।শিশুর জন্ম গ্রহণের দুই বছরের মধ্যে যদি জন্ম সনদ না করা হয় তাহলে উক্ত শিশুর অভিভাবক /বাবা-মাকে জরিমানার আওতাধীন করা হবে।২০০৮ সালে শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের জন্য জন্ম সনদ কোন ফি ছাড়া করা হতো এই সুবিধাটি ২০১০ সালের জুন এরপরে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৮ বছরের উর্ধ্বে যারা আছে তাদের জন্য ৫০ টাকা নেওয়া হয়। শিশুদের .২বছর হওয়ার আগ পর্যন্ত জন্ম সনদের জন্য কোন ফি দিতে হয় না কিন্তু ২ বছর অতিক্রম হওয়ার পরে ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকার আওতাধীন হলে বছরে ৫ পাঁচ টাকা, সিটি কর্পোরেশন অথবা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকার আওতাধীন হলে বছরে ১০ টাকা ফি লাগে। জন্ম সনদ এর ইংরেজি কপি নেওয়ার জন্য ইউনিয়ন অথবা পৌরসভা এলাকার আওতাধীন হলে ৫০ টাকা এবং সিটি কর্পোরেশন অথবা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকার আওতাধীন হলে ১০০ টাকা ফি লাগে। জন্ম সনদদের বাংলা কবি গ্রহণ করার জন্য ইউনিয়ন অথবা পৌরসভা এলাকার জন্য ২০ টাকা এবং সিটি কর্পোরেশন অথবা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকার জন্য ৪০ টাকা ফি লাগে। তথ্য সংশোধন করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা এলাকার আওতাধীন হলে ১০ টাকা এবং সিটি কর্পোরেশন ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকার আওতাধীন হলে ২০ টাকা ফি জমা দিতে হবে। জন্মসনদ করার জন্য আমরা কোথায় যাব? নিজ ইউনিয়ন পরিষদে। নিজ পৌরসভায়। নিজ সিটি কর্পোরেশনে। নিজ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ওয়ার্ড কাউন্সিলর/কমিশনার এর অফিসে। জন্ম নিবন্ধনের জন্য কারা দায়িত্বরত রয়েছেন ? ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পৌরসভার কাউন্সিলর/কমিশনার পৌরসভার মেয়র/ চেয়ারম্যান সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর/ কমিশনার সিটি কর্পোরেশনের মেয়র/ চেয়ারম্যান জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম কি? যারা বা যাদের শিশুর এখন পর্যন্ত জন্ম সনদ করেননি তারা প্রথমে আপনাদের নিকটস্থ ইউনিয়ন পরিষদের সেক্রেটারি/ পৌরসভার কমিশনার/ মেয়র এর কাছ থেকে ফরম সংগ্রহ করবেন ।সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন হলে সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কমিশনারের কার্যালয় অথবা সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত সনদ শাখায় ফরম পাওয়া যাবে উক্ত ফর্মটি সুন্দর করে পর্যালোচনা করার পর পূরণ করবেন । প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ শিশুদের নিবন্ধনের জন্য শিশু যদি কোন হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করে তাহলে উক্ত হাসপাতালের সনদ বা ছারপত্র প্রয়োজন হবে। যদি প্রাপ্তবয়স্ক করা জন্ম সনদ করতে যান তাহলে যেকোনো পরীক্ষার সনদের ফটোকপি আইডি কার্ডের ফটোকপি পাসপোর্ট এর ফটোকপি এবং নিজ এলাকার প্রতিনিধি যেমন পৌরসভার ওয়ার্ড কমিশনার/ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান/ পৌরসভার চেয়ারম্যান,/সিটি কর্পোরেশন ওয়ার্ড কমিশনার /,সিটি কর্পোরেশন চেয়ারম্যান এর কাছ থেকে নাগরিকত্ব সার্টিফিকেট এর ফটোকপি আনতে হবে।এই সকল কাগজপত্র এর সাথে ফর্মটি একত্রিত করে জমা দিবেন তখন অফিস কর্তৃপক্ষ আপনাকে একটি টোকেন প্রদান করিবেন উক্ত টোকেন কেন আপনার কাছে যত্ন সহকারে রাখিবেন এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে গিয়ে আপনার সকল তথ্য তাদের কাছে হস্তান্তর করিবেন এবং সরকার কর্তৃক নির্ধারিত যেই ফি প্রদান করা আবশ্যক সেটি প্রদান করিবেন। জন্ম সনদ প্রাপ্তিতে বিলম্ব হইলে দায়িত্ব রত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অভিযোগ দায়ের করিবেন। Post navigation জন্ম নিবন্ধন যাচাই করুন সহজেই